১ নং হাদিস
عَنْ أَمِيرِ المؤمِنينَ أَبي حَفْصٍ عُمَرَ بْنِ الخَطَّابِ رَضيَ اللهُ تعالى عنْهُ قَالَ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ يَقُولُ: إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى،
فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلى اللهِ وَرَسُوله فَهِجْرَتُهُ إلى اللهِ وَرَسُوله، وَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ لِدُنْيَا يُصِيْبُهَا، أَو امْرأَة يَنْكِحُهَا، فَهِجْرَتُهُ إِلى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ
‘আমিরুল মুমিনিন আবু হাফস উমর বিন খাত্তাব রা. বলেন, ‘আমি নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, সমস্ত কাজ (এর প্রাপ্য) নিয়তের সাথেই সম্পৃক্ত। আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে (ফলাফল) তা-ই পায়। সুতরাং যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য হবে। আর যার হিজরত হবে দুনিয়া (পার্থিব বস্তু) অর্জন অথবা কোনো নারীকে বিয়ে করার স্বার্থে, তার হিজরত সে উদ্দেশ্যেই হবে, যেজন্য সে হিজরত করেছে।’সহিহুল বুখারি : ১, ৫৪, ২৩৯২ ২৫২৯; সহিহু মুসলিম : ১৯০৭

হাদিসের ব্যাখ্যা
হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে আমিরুল মুমিনিন আবু হাফস উমর বিন খাত্তাব রা. থেকে। উমর রা.-এর ‘আমি শুনেছি’ উক্তিটি প্রমাণ করে যে, তিনি কারও মাধ্যম ছাড়া সরাসরি নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে হাদিসটি গ্রহণ করেছেন।
الأَعْمَالُ ও النِّيَّاتِ শব্দের আভিধানিক অর্থ
الأَعْمَالُ শব্দটি عمَلُ শব্দের বহুবচন। শব্দটি অন্তরের আমল, জবানের আমল ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল—সব প্রকারের আমলকেই অন্তর্ভুক্ত করে।প্রথমত, অন্তরের আমল– যে আমল অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত। যেমন আল্লাহর ওপর ভরসা করা, সর্বাবস্থায় তাঁর দিকে ফিরে আসা, অন্তরে তাঁর ভয় লালন করা ইত্যাদি।
দ্বিতীয়ত, মৌখিক আমল– যে আমল জবানের সাথে সম্পৃক্ত। জবানের কথাবার্তা কত বেশি! জবানের আমলের চেয়ে এত বেশি পরিমাণ আমল অন্য কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গের হয় বলে আমার জানা নেই। তবে হ্যাঁ, চোখ ও কানের দ্বারাও অনেক আমল হয় তবে জবানের কথাই সবচেয়ে বেশি।
তৃতীয়ত, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল। যেমন হাত, পা ইত্যাদি অঙ্গের আমল।
হাদিসের বক্তব্য :
إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ
‘সমস্ত কাজ (এর প্রাপ্য) নিয়তের সাথেই সম্পৃক্ত।’
النِّيَّاتِশব্দটি ‘نية’ শব্দের বহুবচন। নিয়তের আভিধানিক অর্থ, ইচ্ছা করা। পরিভাষায় নিয়ত বলা হয়,
‘আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ইবাদত-বন্দেগির দৃঢ় সংকল্প করা।’ নিয়তের উৎস অন্তর। অতএব এটা অন্তরের আমল। এর সাথে অঙ্গপ্রত্যঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই।
হাদিসের বক্তব্য :
وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى
‘আর প্রত্যেক ব্যক্তি যা নিয়ত করে (ফলাফল) তা-ই পায়।’
অর্থাৎ প্রত্যেক মানুষ সেটাই পায়, সে যেটার নিয়ত করে।হাদিসের উল্লিখিত দুটি বাক্যের ব্যাপারে উলামায়ে কিরামের দুধরনের মতামত রয়েছে।প্রথমত, বাক্য দুটি সমার্থক। প্রথমে নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ বলেছেন, এরপর পুনরায় وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى বলে পূর্বের কথাটিকে সুদৃঢ় করেছেন।
দ্বিতীয়ত, বাক্য দুটি ভিন্ন ভিন্ন অর্থ বহন করে। প্রথমটি বলা হয়েছে নিয়তকৃত কাজের দিকে লক্ষ করে। আর দ্বিতীয়টি বলা হয়েছে কাজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের দিকে লক্ষ করে। অর্থাৎ কাজটি কি আল্লাহর জন্য কাজ করা হচ্ছে নাকি দুনিয়ার জন্য?এ বিষয়টি প্রমাণ করে নবি কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পরবর্তী কথা, فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلى اللهِ وَرَسُوله فَهِجْرَتُهُ إلى اللهِ وَرَسُوله (সুতরাং যার হিজরত হবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উদ্দেশ্যে, তার হিজরত আল্লাহ ও তাঁর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্য হবে।) এ থেকে সাব্যস্ত হয় যে, হাদিসে বাক্যের কোনো তাকরার বা পুনরাবৃত্তি নেই।